স্বদেশ ডেস্ক:
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদের বেধড়ক মারপিটে রইছপুর গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে দিনমজুর সমশের আলীর (৩০) বাম হাতের কবজি ভেঙে গেছে। ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ দোয়ারাবাজার উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সিনিয়র সদস্য।
জানা যায়, গাজীনগর গ্রামের মসজিদের ব্যাটারি চুরির অপবাদ দিয়ে গত ১ আগস্ট, ঈদের দিন দুই দফা মারপিট করা হয়েছে সমশের আলীকে। এ সময় দুই থেকে আড়াই ’শ বেত্রাঘাত করেন পান্ডারগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ।প্রথম দফা মারা হয় উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের গাজীনগর গ্রামের মসজিদ প্রাঙ্গণে ও দ্বিতীয় দফা মঙ্গলপুর বাজার এলাকায় অবস্থিত চেয়ারম্যান ফারুকের বাসায়। সমশের আলীর হাত-পায়ের নখের নিচে সুঁচও ঢোকানো হয়। সুঁচ ঢোকান গ্রামের আবুল খায়ের নামে এক যুবক। আবুল খায়ের পার্শ্ববর্তী আফসরনগর গ্রামের আব্দুল বারির ছেলে।
মারধর শেষে সমশের আলীকে সারারাত আটকে রাখা হয় বাথরুমের ভেতরে। স্বীকারোক্তি না পেয়ে পরের দিন সকালে সমশের আলীকে ছেড়ে দেন চেয়ারম্যান। পরিবারের লোকজন সমশের আলীকে উদ্ধার করে প্রথমে দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। তিনদিন পর তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করেন চিকিৎসকরা। এক্সরে রিপোর্টে তার কবজি ভেঙে যাওয়া ধরা পড়ে।
সমশের আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘যে দিন আমাদের পার্শ্ববর্তী গ্রাম গাজীনগরের মসজিদের ব্যাটারি চুরি হয় সেদিন আমি সিলেটের ভোলাগঞ্জে কাজে ছিলাম। ঈদের দিন চেয়ারম্যান লোক পাঠিয়ে আমাকে মসজিদে আসার জন্য বলেন। আমি আসার পর চেয়ারম্যান নিজেই রশি দিয়ে হাত বেঁধে ফেলেন। পরে তিনি আমাকে দুই থেকে আড়াই শ’ বার বেত মারেন। যখন আমার একটা হাত ভেঙে যায় তখন আমি চিৎকার করে বলেছি আর মাইরেন না আমি মরে যাব। এরপরও আমাক মারে চেয়ারম্যান। পরে চেয়ারম্যানের বাসায় নিয়ে দরজা বন্ধ করে আরেক দফা মেরে বাথরুমের ভেতরে সারারাত বন্দী করে রাখেন। আমার হাতের ব্যথা সহ্য করতে পারছিলাম না। কান্নাকাটি করলে আমার মুখ চেপে ধরেন। আমাকে সারারাত একটু পানিও খেতে দেননি। আমার হাতের অবস্থা খারাপ দেখে সকালে চেয়ারম্যান বাথরুম থেকে বের করে ছেড়ে দেন।’
ভোলাগঞ্জে সমশের আলীর সঙ্গে কাজে থাকা গাজীনগর গ্রামের তফুর আলী বলেন, ‘যেদিন আমাদের গ্রামের মসজিদের ব্যাটারি চুরি হয়েছিল সেইদিন আমরা একসঙ্গে কাজে ছিলাম। চুরির অভিযোগ মোটেও ঠিক না।’
পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ বলেন, ‘সমশের আগে থেকেই চুরি করত। সে কারণে তাকে গ্রামের লোকজন দিয়ে ডেকে এনে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। লোকজন সমশের আলীকে মারধর করতে চাইছিলেন, আমি মারতে দেইনি। আমি কয়েকটা চড়থাপ্পড় মারছি। রাতে ছেড়ে দেইনি কারণ পরিবারের লোকজন যদি গুম মামলা করে সে জন্য।’
এ ঘটনায় আহত সমশের আলী বাদী হয়ে গত ১৭ আগস্ট ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ ও আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মামলা রেকর্ড করার নির্দেশ প্রদান করেছেন।
আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে সমশের আলীর আইনজীবী নাজমুদ হুদা হিমেল বলেন, ‘মারধরে সমশের আলীর বাম হাতের কবজি ভেঙে গেছে, যা এক্সরে রিপোর্টে উল্লেখ আছে।’
এ ব্যাপারে দোয়ারাবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আদালতের আদেশটি শুক্রবার পর্যন্ত থানায় এসে পৌঁছেনি। আদেশ পাওয়ার পর তা বাস্তবায়ন করা হবে।’
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা বলেন, ‘এভাবে চেয়ারম্যান কাউকে মারতে পারেন না। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। চুরি করলে তাকে আইনের হাতে তুলে দিতে পারতেন। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’